পোল্ট্রি খামারে জৈব নিরাপত্তা

কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ : শীতের আগেই হাঁস-মুরগি, কবুতর ও কোয়েলের খামারগুলোতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়। কারণ বার্ড ফ্লু, রানীক্ষেত ও গামবোরো রোগের ভাইরাস কম তাপমাত্রায় অর্থাৎ শীতের আগে, শীতের সময় ও শীতের পরপরই সক্রিয় হয়ে মুরগিতে আক্রমণ করে। এজন্য হাঁস-মুরগির খামারগুলোতে জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কোন ভাবেই জীবাণু খামারে ঢুকতে না পারে এবং মুরগিতে সংক্রমিত না হয়। খামারে ভাইরাস জীবাণু সংক্রমিত হলে মুরগির মৃত্যু নিশ্চিত। তাই প্রতিরোধকমূলক অর্থাৎ জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থাই পোল্ট্রি শিল্পকে রক্ষা করার একমাত্র উপায়। খামারে জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা করার জন্য সরকার, খামারের মালিক, কর্মকর্তা, কর্মচারি, পোল্ট্রি সামগ্রী আমদানি, রফতানিকারক, ক্রেতা-বিক্রেতাসহ পোল্ট্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে। বার্ড ফ্লু রোগ নিয়ে চিন্তার কারণ এর ভাইরাস (এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ঐ ঘ ) মানুষকেও আক্রান্ত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এজন্য দেশের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

হাঁস-মুরগি, কবুতর ও কোয়েলের খামারে জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে-

  1. খামারের প্রধান গেট তালা দিয়ে রাখতে হবে। “জৈব নিরাপত্তা চালু আছে, প্রবেশ নিষেধ সাইনবোর্ড লাগাতে হবে।
  2. খামারের চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  3. খামারের শেডের পাশে খাদ্যদ্রব্য ফেলা যাবে না, এতে বন্য পাখি আসবে।
  4. দর্শনার্থী /বহিরাগতদের প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না।
  5. খামারের ভেতরে নিয়োজিত কর্মীদের খামার কর্তৃক প্রদত্ত জীবাণুমুক্ত পোশাক, জুতা, টুপি ইত্যাদি পরিধান করতে হবে।
  6. খামারের ভেতরে প্রবেশের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, ভ্যান, গাড়িসহ সবকিছু জীবাণুমুক্ত করে প্রবেশ করাতে হবে।
  7. খামারের মালিক, ম্যানেজার ও অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারির পরিধেয় সবকিছু জীবাণুমুক্ত হতে হবে।
  8. মুরগির ঘরের দরজা বন্ধ রাখতে হবে, যাতে বিড়াল, কুকুর, ইঁদুর, সাপ, বেজি ইত্যাদি প্রবেশ না করতে পারে।
  9. এক খামরের লোক অন্য খামারে জীবাণুমুক্ত হয়ে প্রবেশ করতে হবে।
  10. মুরগির খামারের কর্মীদের বন্য পাখির দোকানে যাওয়া যাবে না।
  11. খামার পরিত্যাগের সময় খামারের বস্ত্রাদি পরিবর্তন করে হাত-পা ভালোভাবে ধুতে হবে।
  12. প্রতিটি শেডের সামনে পা ডোবানোর সলিউশন রাখতে হবে।
  13. প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া বিদেশ থেকে মুরগির বাচ্চা, ডিম, খাদ্য, সরঞ্জামাদি আমদানি নিষেধ।
  14. দেশের ভেতর থেকে বাচ্চা সংগ্রহের আগে নিশ্চিত হতে হবে যে, ঐ খামারে গত একবছরে কোন রোগ দেখা দেয়নি।
  15. অতিথি পাখি খামারের আশেপাশে বা ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। খামারের
  16. কর্মীদেরও অতিথি পাখির কাছে যাওয়া যাবে না। কারণ শীতকালে বিভিন্ন দেশ থেকে এদেশে অতিথি পাখি আসে। পাখিগুলো বিভিন্ন রোগের জীবাণু বহন করতে পারে।
  17. ক্কোনো মুরগি অসুস্থ হলে বা মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে জেলা বা উপজেলা পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে জানাতে হবে।
  18. মৃত মুরগি মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
  19. খামারে প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার জন্য একটি পথ চালু থাকবে।
  20. দূষণ প্রতিরোধে ফগিং চালু রাখতে হবে।
  21. মুরগি ও ডিম বিক্রি করে খাঁচা, সরঞ্জামাদি ও যানবাহন পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করাতে হবে।
  22. অবিক্রিত মুরগি ও ডিম খামারের ভেতর দেয়া যাবে না।
  23. মুরগিকে সময়মতো সব রোগের টিকা দিতে হবে।
  24. মুরগি, হাঁস, কবুতর ও অন্যান্য পাখি একত্রে পালন করা যাবে না।
  25. খামারে অল-ইন-অল-আউট পদ্ধতিতে মুরগি পালন করা।
  26. অতিথি পাখি শিকার বন্ধ করা।
  27. বাড়িতে পালার জন্য বাজার থেকে কেনা মুরগি অন্তত ১৫ দিন আলাদা রেখে তারপর বাড়ির মুরগির সঙ্গে রাখতে হবে।
  28. খামারের ভেতরে প্রবেশের সময় জীবাণুমুক্ত গ্লাভস, গ্যামবুট, মাস্ক, টুপি, এপ্রোন ব্যবহার করতে হবে।
  29. এক শেডের যন্ত্রপাতি বা ব্যবহার্য জিনিসপত্র অন্য শেডে ব্যবহার করা যাবে না।
  30. আক্রান্ত মুরগির বিষ্ঠা, ময়লা, বর্জ্য মাটির গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে।
  31. জীবাণুনাশক হিসাবে সাবান, ডিটারজেন্ট, ভারকন, ফার্মফ্লুইড, হাইপেরক্স, লংলাইফ ২৫০ ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
  32. মুরগির মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দিলে পশু হাসপাতালে জানাতে হবে। অস্বাভাবিক আচরণের মধ্যে রয়েছে মুরগি পর পর ২ দিন ২০% হারে পানি ও খাদ্য কম খেলে এবং ডিম উৎপাদন পর পর ২ দিন ২০% হারে কমলে পশু হাসপাতালে নিতে হবে।

“জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

রোগমুক্ত খামার গড়–ন”।

লেখক: কৃষি প্রাবন্ধিক, সহকারী অধ্যাপক, কৃষিশিক্ষা, শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল। বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত লেখক। মোবাইলঃ ০১৭১১-৯৫৪১৪৩।

Related posts

Leave a Comment

CAPTCHA ImageChange Image