খরচ অর্ধেক কমবে চারা পদ্ধতিতে আদা চাষে

মুজিব শতবর্ষে করোনা সংকটকালীন নতুন কৃষি প্রযুক্তির মাঠ প্রয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রংপুর অঞ্চল। ‘এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা বাস্তবায়ন উদ্যোগের একটি অংশ হিসেবে রংপুর মেট্রো এলাকার ছাদ কৃষি ও বসতবাড়ির আঙিনায় মসলা ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী নিজ উদ্যোগে গত সোমবার তাঁর অফিস চত্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাদবাগানী ও স্থানীয় কৃষিজীবীদের মাঝে আদা ও মরিচের চারা বিতরণ করেন। পর্যায়ক্রমে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার আদার চারা ও সমপরিমাণ হাইব্রিড মরিচের চারা ছাদ বাগানী ও স্থানীয় কৃষিজীবিদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চারা বিতরণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ রংপুর জেলা শাখার সভাপতি ও ডিএই এর অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আলী আজম, ডিএই রংপুর জেলার উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. সরওয়ারুল হক, রংপুর মেট্রো কৃষি অফিসের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোসলেমা খাতুন, সিনজেনটা ফাউন্ডেশন ফর সাসটেনেবল এগ্রিকালচারাল, বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার কৃষিবিদ মো. শাহিনুর ইসলাম শাহিন, নাশিক প্লান্ট এন্ড পট, রংপুর এর কৃষিবিদ জান্নাত মৌ প্রমুখ।
বাংলাদেশে বাৎসরিক ২ লক্ষ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন আদা চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৮০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হয়ে থাকে। যদিও এক সময় আদা উৎপাদনে এদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল এবং সে সময় রংপুর-নীলফামারী জেলা থেকেই দেশের মোট চাহিদার ৭০ ভাগ আদা সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে রংপুর বিভাগ উৎপাদিত আদার মাত্র ২৭ ভাগ সরবরাহ করে থাকে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, আদার কন্দ পচা রোগের প্রাদুর্ভাব এবং পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিযোগী ফসলের চাষ বৃদ্ধি হওয়ায় আদার চাষ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করা হয়। আদার চারা উৎপাদন করে মাঠে বা টবে রোপণের এ প্রযুক্তিটি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বলে দাবি করছেন চারা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রংপুরে অবস্থিত নাশিক প্লান্ট এন্ড পট এর প্রতিনিধি। প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে গিয়ে কৃষিবিদ মো. শাহিনুর ইসলাম শাহিন বলেন বর্তমানে আদা চাষে যে পরিমাণ বীজ-আদার প্রয়োজন হয় তার চেয়ে এ পদ্ধতিতে আট ভাগের এক ভাগ বীজ আদার প্রয়োজন হবে। এ প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ বাস্তবায়ন হলে কেবল বীজ আদা হতেই বছরে প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন আদা অপচয় রোধ করা সম্ভব। প্রচলিত পদ্ধতিতে যেখানে এক কেজি বীজ আদা দিয়ে মূল জমিতে ২৫-৩০টি গাছ উৎপাদিত হয়, সেখানে মাটিবিহীন ও মাইক্রোপ্রোপাগেশনের এ পদ্ধতিতে ২৫০-৩০০ চারা গাছ উৎপাদন করে মূল জমিতে রোপণ করা যায়। এ প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে আদা চাষে মোট উৎপাদন খরচের প্রায় অর্ধেক সাশ্রয় হবে। অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী জানান সাধারণত আদা রোপণের সময় আদা বীজ যাতে চুরি না হয় সে জন্য আদা চাষিরা আদা রোপণের সাথে সাথে পাহারার ব্যবস্থা করে থাকেন। তবে নতুন এ প্রযুক্তিতে এ ধরণের সামাজিক সমস্যার কোন সুযোগ থাকবে না। সাধারণত আদা রোপণ মে মাসে শেষ হলেও চারা পদ্ধতিতে জুনের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত লাগানো যায়। চারা উৎপাদনের ফলে মূল জমিতে বাড়তি ফসল ফলানোর জন্য বাড়তি এক মাস ফাঁকা পাওয়া যাবে। চারা রোপণের পর অতি বৃষ্টিপাত হলেও ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক কম হয়ে থাকে, যেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে আদা পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তিনি আরও জানান এবারের উৎপাদিত চারার ফলাফল নিরুপনের জন্য নিবিড় মনিটরিং করা হবে এবং এর ফলাফল সন্তোষজনক হলে আগামীতে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে আদা চাষের ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের সুযোগ পেয়ে আমন্ত্রিত প্রায় ৩০জন কৃষিজীবি ও ছাদবাগানীদের মাঝে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়।
ছবির ক্যাপশন-
১। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উদ্যোগে রংপুর মেট্রো এলাকার কৃষিজীবি ও ছাদবাগানীদের মাঝে আদা-মরিচের চারা বিতরণ করছেন অতিথিবর্গ।
২। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উদ্যোগে রংপুর মেট্রো এলাকার কৃষিজীবি ও ছাদবাগানীদের মাঝে বিতরণের জন্য উৎপাদিত আদার চারা।
সংবাদ পরিবেশনায়- কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম, পিএইচডি গবেষক, হাবিপ্রবি, দিনাজপুর।

Related posts

Leave a Comment

CAPTCHA ImageChange Image