কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ডিম ভাল কাজ করছে

প্রতিদিন দরকার ২টি ডিম

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ডিম ভাল কাজ করছে

ডিম নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে: গ্রামের অধিকাংশ মা এখন তাঁর সন্তানকে ডিম দিচ্ছেন

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এলডিডিপি প্রকল্পে ২ লাখ পোল্ট্রি খামারি পাবে নগদ সহায়তা

৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ডেইরি ও পোল্ট্রি খামারিদের জন্য

এ বছর ডিম কেন্দ্রিক বাণিজ্য ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে

৯ অক্টোবর ২০২০: “প্রতিদিন ডিম খাই, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই” ¯েøাগান নিয়ে আজ সারাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবস। কোভিড-১৯ মহামারিতে টিকার অভাবে সারাবিশ্ব যখন এক কঠিন সময় পার করছে তখন ইমিউনিটি ও এন্টিবডি তৈরিতে সহায়তা করার মাধ্যমে ডিম এক উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করে চলেছে। ডিমে থাকা ভিটামিন ডি এবং জিংক কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করছে। আজ বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনলাইন কনফারেন্সে গুরুত্বপূর্ণ এ তথ্যগুলো জানানো হয়। কনফারেন্সটি যৌথভাবে আয়োজন করে সরকারের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন – বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি)। সঞ্চালক ছিলেন বিপিআইসিসি’র সভাপতি মসিউর রহমান।

কোভিড-১৯ মহামারি সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য পোল্ট্রি, ডেইরি ও মৎস্য খামারিদের ধন্যবাদ জানান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এবং মৎস্য  ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব রওনক মাহমুদ। তিনি বলেন, বহু তরুণ বেকার হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। তাঁদেরকে পোল্ট্রি খামার করতে উদ্বুদ্ধ করা হলে ডিমের উৎপাদন আরও বাড়বে। রওনক বলেন, ডিম নিয়ে সাধারন মানুষের মাঝে অনেক ভুল ধারণা আছে সেগুলো দূর করা দরকার। তিনি বলেন, গ্রামের অধিকাংশ মা এখন তাঁর সন্তানকে ডিম দিচ্ছেন। এটি একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। সচেতনতা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে প্রচারণা খাতে বাজেট বরাদ্দ করার অনুরোধ জানান জনাব রওনক। সচিব বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় মোট ৬ লাখ ২০ হাজার পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারিকে ৬৮৬ কোটি টাকার সহায়তা দেয়া হবে। এর আওতায় প্রায় ২ লাখ পোল্ট্রি খামারিকে নগদ সহায়তা প্রদান করা হবে। তবে কোনো ভুয়া খামারি যেন এ সহায়তা না পায় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। গত ৮ অক্টোবর পর্যন্ত প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত ভ্রাম্যমান গাড়িতে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার ডিম বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান জনাব রওনক। মিড-ডে-মিলে ডিম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য এবং ডিমের পুষ্টিগুণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তভর্‚ক্ত করার বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করেন জনাব রওনক। তিনি বলেন, ডিমের উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে তবে দাম যেন সাধারন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে সে বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ আবদুল জব্বার শিকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনার আওতায় ডেইরি ও পোল্ট্রি খামারিদের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার সহায়তা প্রদান করা হবে। তিনি জানান- এ বছর ডিমের মাথাপিছু কনজাম্পশন ১০৪.২৩টিতে উন্নীত হয়েছে যা এফএও নির্দেশিত সংখ্যার চেয়েও বেশি। জনাব শিকদার বলেন- উৎপাদন উৎসাহিত করতে সরকার পোল্ট্রি ফিডের কাঁচামাল আমদানিতে আরোপিত কর ও শুল্ক শূণ্যের কোটায় নামিয়ে এনেছেন।

প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার বলেন, এক পরিসংখ্যান মতে ২০১৯ সালে সারাবিশ্বে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮২ কোটি, এর মধ্যে এশিয়ায় ৫১ কোটি। বাংলাদেশে অপুষ্টির হার আগের তুলনা অনেক কমেছে দাবি করে তিনি বলেন- ২০১৭-১৮ স্বাস্থ্য সমীক্ষা মতে খর্বাকায় শিশুর সংখ্যা ৪১শতাংশ থেকে ৩১ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশিষ্ট এ বিজ্ঞানীর দাবি দেশি মুরগির ডিমের চেয়ে পোল্ট্রি মুরগির ডিমের পুষ্টির পরিমাণ বেশি কারণ এ ডিমের আকার বড়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. খালেদা ইসলাম বলেন, অনেক সময় অসুস্থদের ডিম খেতে দেয়া হয়না, বৃদ্ধদের ডিম খেতে বারণ করা হয়- এই ভেবে যে হজম হবেনা কিন্তু এগুলো সবই ভুল ধারণা। ডিম অত্যন্ত সহজপাচ্য এবং রোগ প্রতিরোধে খুবই দরকারি। খালেদা ইসলাম বলেন, দিনে দু’টি করে ডিম খেতে কোন সমস্যা নেই। ভিটামিন বি১২ ও ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণে গ্রামের গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন ২টি করে ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ড. খালেদা বলেন, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি থাকলে কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যেহেতু ডিমে প্রাকৃতিকভাবেই ভিটামিন ডি থাকে তাই মহামারি চলাকালীন সময়ে বেশি বেশি ডিম খাওয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের প্রফেসর ড. শওকত আলী এবং বিভাগীয় চেয়ারপারসন প্রফেসর ড. ইলিয়াস হোসেন তাঁদের মূল প্রবন্ধে বলেন, বিশেষ ধরনের ডিম ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। ডিম খেলে যাদের এলার্জির সমস্যা হয় তাদেরকে হাইপো সেনসিটিভ ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন তাঁরা। ড. শওকত বলেন, ডায়বেটিসে আক্রান্ত রোগিরা সপ্তাহে ১২টি করে ডিম খেলে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার বলেন, ডিম শুধু যে খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ করছে তাই-ই নয়, এ পেশার কারনে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, দারিদ্র দূর হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর  দেশে ডিম কেন্দ্রিক বাণিজ্য হয়েছিল প্রায় ১২ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকার। এ বছর তা আরও বাড়বে। শাহরিয়ার জানান, গত ৮ ও ৯ অক্টোবর সারাদেশের ৫০টি স্পটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুরোধে প্রায় ১ লাখ ডিম বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বস্তি, এতিমখানা এবং নি¤œআয়ের মানুষ। ডিম দিবস উপলক্ষ্যে এক লাখ পোষ্টার সারাদেশে বিতরণ করা হয়েছে।

Related posts

Leave a Comment

CAPTCHA ImageChange Image