ওয়াপসা- বিবি’র বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

পোল্ট্রি রিসার্চ গ্রান্ট, বিভাগীয় কমিটি গঠন, আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো ও সেমিনার আয়োজনের ঘোষণা

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সদস্যের আনন্দঘন উপস্থিতির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন- বাংলাদেশ শাখা’র (ওয়াপসা-বিবি) বার্ষিক সাধারন সভা। সংগঠনটির সভাপতি মসিউর রহমানের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দিনের কার্যাবলী শুরু হয় রাজধানীর মহাখালিস্থ এস.কে.এস টাওয়ারে।

মসিউর রহমান বলেন, বিজ্ঞান ও শিল্প একে অন্যের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পোল্ট্রি একটি বিজ্ঞানভিত্তিক শিল্প তাই দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পের অগ্রগতিতে বিজ্ঞান ও গবেষণাকে যথোপযুক্তভাবে কাজে লাগাতে হবে এবং সেক্ষেত্রে ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারে। ব্রয়লার মাংস নিয়ে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সাম্প্রতিক গবেষণা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জনাব মসিউর বলেন- গবেষণাটি কিভাবে হয়েছে, নমুনা সংগ্রহ, গবেষণা পদ্ধতি, গবেষণার উদ্দেশ্য প্রভৃতি বিষয় খতিয়ে দেখা দরকার। তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি- এ ধরনের গবেষণাগুলো চৎড়নষবসধঃরপ এলাকা ধরেই পরিচালিত হচ্ছে। ফলে গবেষণা না করেই অনেকক্ষেত্রে বলে দেয়া সম্ভব, জবংঁষঃ কী আসতে পারে। এ ধরনের গবেষণার লক্ষ্য কি দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়ন? নাকি ক্ষতি সাধন করা- সে বিষয়েও আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না। যে এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে সে এলাকার পানিতে মাত্রাতিরিক্ত দূষণের খবর প্রচার করেছে চ্যানেল-২৪ টিভি অথচ ট্যানারি কিংবা গার্মেন্টস শিল্পকে দোষী না বানিয়ে ভিলেন বানানো হচ্ছে পোল্ট্রি শিল্পকে। বরাবরের মত এ গবেষণাতেও আন অর্গানাইজড সেক্টর এবং অনিবন্ধিত পোল্ট্রি খামার ও ফিড মিল কে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। অর্গানাইজড সেক্টর নিয়ে গবেষণা হচ্ছেনা। সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনগুলোকেও আমলে নেয়া হচ্ছেনা। তাই এ বিষয়ে আমাদের কাজ করা দরকার।  বেশ ক’বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক এক অধ্যাপকের ভুল গবেষণার বলি হতে হয়েছিল দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পকে। সে কারণেই এ ধরনের গবেষণাগুলো সম্পর্কে আমাদের ভালভাবে জানা দরকার। এর পাশাপাশি অরগানাইজড সেক্টর নিয়ে একাধিক গবেষণাও করা দরকার। তা না হলে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প কতটা অগ্রগতি অর্জন করেছে; ডিম ও মুরগির মাংসের ছঁধষরঃু কতটা ওসঢ়ৎড়াব করেছে- সে সম্পর্কে সাধারন ভোক্তারা কিছুই জানতে পারছেন না। ফলে তাঁরা ভুলের মাঝেই রয়ে যাচ্ছেন এবং মুরগির মাংস ও ডিম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণাই পোষণ করছেন। বর্তমান কমিটি চেষ্টা করবে এ বিষয়েও কিছু কাজ করতে এবং জনমনে বিরাজমান বিভ্রান্তিগুলো দূর করতে।

জনাব মসিউর বলেন, সদস্য সংখ্যা এবং প্রায়োগিক ক্ষেত্রে অবদান বিবেচনায় ওয়াপসা- বাংলাদেশ শাখা বিগত বছরগুলোতে বিশ্বে শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে। “এ সম্মান আমরা ধরে রাখতে চাই। আমি মনেকরি শুধুমাত্র সদস্য সংখ্যার ভিত্তিতে নয় বরং মৌলিক গবেষণা, ইনোভেটিভ এপ্রোচ এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পোল্ট্রি খাতের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার মাধ্যমেই আগামীতে ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখা তার স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য ও সম্মান অক্ষ‚ন্ন রাখবে।”  জনাব মসিউর বলেন, প্রত্যেকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবদানের মধ্য দিয়েই আজকের অর্জন সম্ভব হয়েছে। আমরা সামনে এগুতে চাই এবং সেজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

২০২১-২২ সালের জন্য একটি কর্ম-পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন ওয়াপসা-বিবি’র সাধারন সম্পাদক মো. মাহাবুব হাসান। তিনি জানান, ২০২২ সালের ২-৪ জুন একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং ২০২৩ সালের ২-৪ মার্চ আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো ও সেমিনার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে ওয়াপসা-বিবি’র নেটওয়ার্ক কে আরও শক্তিশালী করা এবং বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গৃহীত কর্মসূচীকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে ওয়াপসা-বিবি’র বিভাগীয় কমিটি গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত  নেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও অনুরূপ কমিটি গঠন করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয় পর্যায়ের পোল্ট্রি উদ্যোক্তা ও খামারিগণ স্থানীয় কমিটিতে নেতৃত্ব দেবেন। জনাব হাসান বলেন, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় কয়েকটি মডেল খামার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। নিরাপদ ডিম ও মাংস উৎপাদন এবং লাভজনক খামার প্রতিষ্ঠায় সাধারন খামারিদের উদ্বুদ্ধ করাই এর লক্ষ্য। খামারিদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তিনটি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরির কাজও চলছে। ঝষড়ি মৎড়ঃিয ইৎড়রষবৎ রিঃয ষড়ি ফবহংরঃু ভববফ বিষয়ে আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিঃ, ডধঃবৎ গধহধমবসবহঃ বিষয়ে নারিশ পোল্ট্র্রি এন্ড হ্যাচারি এবং চড়ঁষঃৎু ডধংঃব গধহধমবসবহঃ বিষয়ে প্যারাগন গ্রæপ প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরির কাজ করছে। তাছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের কনসালট্যান্ট ড. ওয়াসেল সাদাতের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল ব্রয়লার মাংসের কোয়ালিটি ও তার কনজাম্পশন বাড়ানো বিষয়েও একটি গবেষণা পরিচালনা করছেন। আগামী বছর ২০২২ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বিপিআইসিসি’র সাথে যৌথ উদ্যোগে দেশব্যাপী ‘বিশ্ব ডিম দিবস’ উদযাপন করা হবে। তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি পোল্ট্রি ফেস্ট আয়োজনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রæয়ারি মাস নাগাদ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত রূপায়ন শপিং স্কয়ারে ওয়াপসা-বিবি কার্যালয় স্থানান্তরিত করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন জনাব হাসান। তিনি বলেন, পোল্ট্রি বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের গবেষণায় সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ‘ওয়াপসা-বিবি রিসার্চ গ্রান্ট’ প্রদান করা হবে। বড় ১০টি কোম্পানীর অর্থায়নে ৫০ লাখ টাকার একটি ফান্ড গঠন করা হবে- যা থেকে প্রতি বছর ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন গবেষককে রিসার্চ গ্রান্ট প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে বলেও জানান জনাব মাহাবুব হাসান।

২০২০-২১ সালের আর্থিক বিবরণী এবং ২০২১-২২ সালের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন সংগঠনের কোষাধক্ষ্য ডা. বিপ্লব কুমার প্রামাণিক। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন নির্বাহী সদস্য ডা. মো. নুরুল ইসলাম (শাওন)।

উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. এস ডি চৌধুরি। তিনি বলেন, বিভাগীয় কমিটিতে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তেমনিভাবে কেন্দ্রিয় কমিটিতেও শিক্ষকদের আসন রাখার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে ওয়াপসা-বিবি ম্যানেজমেন্ট।  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রফেসর মো. জালাল উদ্দিন সরদার- প্রান্তিক খামারিদের জন্য সরকারি ভর্তুকী বা প্রণোদনার; রাবি’র ডেপুটি চীফ ভেটেরিনারিয়ান ড. মো. হোমায়েতুল ইসলাম- দেশে একটি পোল্ট্রি মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করার; এবং এসিআই  এনিমেল হেলথ এর চীফ টেকনিক্যাল এডভাইজর ড. এম এ ছালেক- ওয়াপসা-বিবি’র উদ্যোগে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা করার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।

প্রশ্ন-উত্তর পর্বে ওয়াপসা-বিবি সভাপতি জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে দু’টি করে সেদ্ধ ডিম দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। সরকার সপ্তাহে একটি ডিম খাওয়ানোর ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। করোনার প্রভাব কাটিয়ে স্কুলগুলো স্বাভাবিক নিয়মে চালু হলে সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মসিউর রহমান। তিনি বলেন, শুধু তাই নয় সরকারের পক্ষ থেকে স্কুলগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে- যেন স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন এবং বাচ্চাদের পুষ্টিকর খাবার ও ডিম খাওয়ানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। জনাব মসিউর আরও বলেন, সরকার নানাভাবে পোল্ট্রি শিল্পকে সহায়তা প্রদান করছেন। দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প- মাংস, ডিম ও মাংসজাত প্রোডাক্ট রপ্তানির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ বাস্তবতায় দেশীয় পোল্ট্রি পণ্যের বিদেশী বাজার অনুসন্ধান ও নতুন নতুন বাজার তৈরিতে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাসগুলোকে কাজে লাগাতে পারলে তা দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পের অগ্রগতিতে এবং বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে সহায়ক হবে।

Related posts

Leave a Comment

CAPTCHA ImageChange Image